জঙ্গলমহলে উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ সংখ্যালঘু কৃতি ছাত্রীর বিয়ে আটকে, স্নাতক পড়ানোর দায়িত্ব নিল এলাকার যুবক আফজল
রাধামাধব মণ্ডল, আউসগ্রাম : জঙ্গলমহলের এক কৃতি ছাত্রী উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর বিয়ের কথাবার্তা পাততে শুরু করেছিলেন তার অসহায় শ্রমিক বাবা। কলেজে আর ভর্তি হতে পারবে না জেনে, বাড়িতে বসে ডুকরে ডুকরে কাঁদছিল মেয়েটি। মেয়েটি অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ হওয়ার পরই, টানাপোড়নের সংসার চালাতে মা মেয়েতে আউশগ্রামের জঙ্গল থেকে পাতা কুড়িয়ে এনে শুরু করেছিল বাড়িতেই চাল তৈরি করে, গ্রামে গ্রামে বিক্রি করা। উচ্চ মাধ্যমিকের আগে থেকেই একই কাজ করে আসছে। সেই সঙ্গে তার অভাবি বাবা আউশগ্রামের এক স্থানীয় ব্যবসায়ির এস এম ডি কোম্পানির ট্রাকের খালাসির কাজ করে। দীর্ঘ লকডাউনে সেই কাজেও শুরু হয়েছে মন্দা, বাবার সেই অসুবিধার কথা ভেবে উচ্চ মাধ্যমিকের পর কলেজে পড়ার এক বুক স্বপ্ন নিয়ে আউশগ্রামের জঙ্গলমহলের গেঁড়াই গ্রামের সদ্য উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ রুবিনা খাতুন বাড়তি আয়ের পথ খুঁজতে শুরু করেছিল কাঁথাস্টিচ সেলাই এর কাজ। তবুও তার অসহায় বাবা জামালউদ্দিন মোল্লা বাধ্য হয়ে, তার স্ত্রী দেলআড়া বেগমের সঙ্গে পরামর্শ করে বিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে। সেই খবর জানাজানি হতেই রুবিনা কান্নাকাটি শুরু করে।
খবর ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়।
খবর গিয়ে পৌঁছায় এস এম ডি কোম্পানির কাছে। তাদের ট্রাকেই কাজ করে কৃতী ছাত্রীর বাবা জামালউদ্দিন মোল্লা। এসএমডি'র মালিক পক্ষের সেখ আফজল রহমান যোগাযোগ করে, কৃতী ছাত্রী রুবিনা খাতুনের বাবার সঙ্গে। তারা কোম্পানির পক্ষ থেকে মেয়েটিকে পড়ানোর দায়িত্ব নেয়। এবিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে এলাকার তরুণ ব্যবসায়ি সেখ আফজল রহমান বলেন, ”মেয়েটি জঙ্গলমহলের অমরপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার গেঁড়াই উচ্চ বিদ্যালয়ের ২০২০ সালের সর্বচ্চ নম্বর প্রাপক। এবছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় সে কলা বিভাগ থেকে ৪৫৪ নম্বর পেয়েছে। তার আগামী ভবিষ্যৎ এর কথা ভেবে, এস এম ডি পরিবারের কর্ণাধার সেখ আব্দুল লালনের সঙ্গে পরামর্শ করে তাকে স্নাতক পড়ানোর দায়িত্ব নিয়েছে আমাদের পরিবার।“
গেঁড়াই উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ড. অনুজ কুমার সাও বলেন,”মেয়েটি বরাবরের জন্য পড়াশোনাতে ভালো। তবে খুব গরীব। মাস্টার মশাইরা বিভিন্ন সময়ে তাকে সাহায্য করে। বাবা বিয়ে দিয়ে দায় মুক্ত হতে চাইছে। তবে তা করলে, ওর ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাবে। প্রশাসনও পাশে দাঁড়াতে চাইছে। তবে এলাকার আরও এক কৃতী যুবক সেখ আফজল রহমান, বড়ো ভাইয়ের মতো এসে পাশে দাঁড়িয়েছে। আমরাও তার পাশে আছি।“
আউশগ্রাম ২ নং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সৈয়দ হায়দার আলী জানান, ”খবর পেয়েছি, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনে প্রশাসন তার পাশে দাঁড়াবে।“
আউশগ্রাম ২ ব্লকের বিডিও গোপাল ভট্টাচার্য বলেন,”খবরটি শুনেছি। আমরা স্থানীয় পঞ্চায়েতকে বলেছি খবর নিয়ে জানাতে। স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গেও কথা বলেছি। সামনের শুক্রবার মেয়েটিকে নিয়ে ওর বাবাকে অফিসে ডেকে পাঠিয়েছি। প্রয়োজন মনে হলে, সরকার পড়ানোর ব্যবস্থা করবে।“