চৈতন্য মহাপ্রভু'র নামে নব নির্মিত তোরণ উদ্বোধন কাটোয়ার দাঁইহাটে

খাদ্য সুরক্ষা দিবস : একটি আলোচনা


খাদ্য সুরক্ষা দিবস : একটি আলোচনা

 ✳ শিবানন্দ পাল 

➡ প্রত্যেকের জন্য প্রয়োজন খাদ্য সুরক্ষা। আর এর জন্য চাই স্বাস্থ্যের অধিকার, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং স্থায়ী উন্নয়ন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা , জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও)  সহযোগিতায় ৭ জুন দিনটি বিশ্ব খাদ্য সুরক্ষা দিবস উদযাপনের জন্য সদস্য দেশগুলির কাছে আবেদন জানায়।

খাদ্য সুরক্ষা সরকার, উৎপাদক এবং উপভোক্তাদের মধ্যে একটি যৌথ দায়িত্ব। খাদ্য যাতে নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যের ক্ষতি না করে তা নিশ্চিত করার জন্য খামার থেকে খাবার টেবিলের মধ্যে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকার দাবি রাখে। বিশ্ব খাদ্য সুরক্ষা দিবসের মাধ্যমে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্ববাসীর কাছে এই বার্তা পৌঁছে দেবার প্রচেষ্টা চালায়।

খাদ্য নিরাপদ এবং নিশ্চিতকরণ রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সরকারকে অবশ্যই সবার জন্য নিরাপদ এবং পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করতে হবে। সেজন্য কৃষিকাজে নিয়মিত প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে হবে এবং সেই পরিবেশের সৃষ্টি করতে হবে। খাদ্য বিপনন ব্যবস্থাকেও করতে হবে নিরাপদ। খাদ্য ব্যবসায়ীরা যাতে ভেজাল না দিতে পারে, অতিরিক্ত মুনাফা না করতে পারে, বিষয়টি সরকারের হাতে‌।

উপভোক্তা নিরাপদ খাবার খাবেন। সকলের স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর খাবারের অধিকার রয়েছে। সুতরাং রাষ্ট্রের ভূমিকা এক্ষেত্রে সব থেকে বড়। আমাদের দেশ এখন চালাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি। সম্প্রতি তাঁর সরকারের দ্বিতীয় পর্বের প্রথম বছর ফুরিয়েছে।

মোদি সরকার নির্বাচনের আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সকল দেশবাসীর জন্য বিষয়টি সুরক্ষিত করবেন। যেহেতু আগের টার্মে তিনিই প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, নির্বাচনের আগে কেন্দ্রীয় বাজেটে খাদ্যে ভর্তুকির পরিমাণ অনেকটাই বাড়িয়ে দেখানো হয়েছিল। ঢাকঢোল পেটানোও হয়েছিল। তিনিই আবার ক্ষমতায় এসে বিজেপি সরকারের দ্বিতীয় পর্বের হাল ধরেন। সরকার চলা শুরু করলে দেখা গেল খাদ্যে ভর্তুকির সম্পূর্ণ টাকা আদৌ দেওয়া হয়নি। কম্প্রট্রোলার এ্যান্ড অডিটার জেনারেলের রিপোর্টে এই তথ্য প্রকাশিত হয়।

নরেন্দ্র মোদি সরকারের দ্বিতীয় পর্বের দ্বিতীয় বছরের শুরু থেকেই ধাক্কা। করোনা মহামারীর আবির্ভাব ঘটেছে দেশে তিনি মত্ত আছেন বন্ধু ট্রাম্পকে নিয়ে, আগ্রার তাজমহলের সৌন্দর্য দেখাচ্ছেন, তিনি মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন আমেদাবাদ শহরকে কেমন জম্পেশ করে সাজিয়েছিলেন এসব দেখাচ্ছেন। করোনা এদিকে গুটিগুটি দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে গেল।

ভাবলেন জনতা কার্ফু আর লকডাউনেই বাজিমাত করে দেবেন! সেজন্য ম্যাজিসিয়ানের মতো আলো নিভিয়ে থালা ঘটিবাটি বাজাবার নির্দেশ দিলেন। দু'মাসের বেশি লকডাউনেও করোনা কাবু হল না। বরং সঙ্কট বাড়িয়ে দিল। আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করলেন। প্যাকেজ কেন? কারণ বাজেটে যেটার উল্লেখ থাকেনা। এখন খরচের রাশ টানতে হবে। বাজেট মাথায় উঠেছে, প্রধানমন্ত্রীর প্যাকেজের ঘোষণার মান থাকলে হয়!

করোনার পর্বের এতকথা আলোচনায় এলো একটাই কারণে, খাদ্য সুরক্ষার প্রশ্ন। ১৩০ কোটি জনসংখ্যার এই দেশে খাদ্য সুরক্ষার বিষয়টি সামান্য নয়। আর এই জন্যই একের পর এক লকডাউন। আবার স্লুইস গেটের মতো খুলে দেওয়া এক একটি পরিযায়ী শ্রমিকদের ট্রেন। কোথাও কোনো পরিকল্পনার ছাপ নেই। যাকে সীমাবদ্ধ করার কথা, খোলা হাওয়ায় ছেড়ে দেওয়া হল। হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ মানুষ দেশের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে হুড়োহুড়ি করে যাতায়াত করছেন। কত মানুষের প্রাণ গেল। সব‌ই খাদ্য সুরক্ষার প্রশ্নে।

লকডাউন আবার তুলে নেওয়া হল। কঠিন বাস্তব যে এটাও খাদ্য সুরক্ষার প্রশ্নে। এত মানুষকে ঘরে বসিয়ে খাদ্যকণা দেবার মতো সদিচ্ছা রাষ্ট্রের নেই। তাই তোলা হল লকডাউন। অর্থনীতি গভীর জলে, তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন অনাহার শুরু হলে আরো বেশি বিপর্যয় নামবে, ফল হবে মারাত্মক!

লকডাউনে কাজ হারিয়েছেন কত শ্রমিক? পরিসংখ্যান নেই। কেউ বলবেন ২০ কোটি। দেশে কতজনের দু'বেলা দু'মুঠো আহারের সংস্থান নেই? পরিসংখ্যান নেই? কেউ বলবেন, এখানেও সেই ২০ কোটি। আগামী ছ'মাস এদের আহারের কী হবে?
সরকার তো লকডাউন তুলে নিয়েছে! এটাই উত্তর! এদের খাদ্য সুরক্ষা থাকবে তো?

সেন্টার ফর সাসটেনেইবল এমপ্লয়মেন্টের
নতুন একটি সমীক্ষা রিপোর্টে বলা হয়েছে, লকডাউন চলাকালীন কর্মহীন হয়েছেন ৬৬ শতাংশ শ্রমিক। এর মধ্যে হয়তো অস্থায়ীভাবে কাজ খুইয়েছেন একটা বড় অংশ। অর্থনীতি চালু হলে হয়তো এরা কাজ ফেরত পেতে পারেন। কিন্তু একটা বড় অংশের‌ই ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। শহরে কাজ হারিয়েছেন ৮০ শতাংশ, গ্রামে ৫৬ শতাংশ। যাঁরা নিয়মিত বেতনের কাজ করতেন তাঁদের মধ্যে ৭৬ শতাংশ কাজ হারিয়েছেন। অস্থায়ী কাজের ক্ষেত্রে মহিলাদের ৮২ শতাংশ কাজ হারিয়েছেন। এমনকি যাঁরা স্বনিযুক্তির কাজে যুক্ত ছিলেন সেখানেও মহিলাদের ৮৯ শতাংশের কাজ বন্ধ হয়েছে। পুরুষদের ক্ষেত্রে ৮২ শতাংশের কাজ গেছে।
এই সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে গুজরাটে কাজ হারানোর পরিমাণ তীব্র। প্রতি দশজনের সাতজন কাজ হারিয়েছেন। এমনকি নিয়মিত বেতনের শ্রমিকদের ৯০ শতাংশের ওপরে কাজ খুইয়েছেন। রাজস্থানে শহরের অস্থায়ী শ্রমিকদের ৯৫ শতাংশের কোনও কাজ ছিল না এই সমীক্ষা যখন চালানো হয়।
শুধু কাজের ক্ষেত্রেই নয়, ৭৭ শতাংশ পরিবার জানিয়েছে, তারা আগের থেকে কম খাদ্য গ্রহণ করছে। শহরে এই হার বেশি, প্রায় ৮৩ শতাংশ। গ্রামে ৭৩ শতাংশ। আরো জানা গেছে যাদের মধ্যে সমীক্ষা করা হয়েছে সেই শ্রমজীবী পরিবারগুলোর ৯০ শতাংশের এক সপ্তাহের নিত্যপণ্য সামগ্রী কেনার সামর্থ ছিল না। দেশের বড় বড় শহরে স্থায়ী-অস্থায়ী, পরিযায়ী শ্রমিকরা এই সময়ে যেমন কাজ হারিয়েছেন তেমনই আয়ের শেষ সংস্থানটুকুও খুইয়েছেন। অর্থাৎ তাঁদের খাদ্য সুরক্ষার বিষয়টি একেবারেই অন্ধকারে ডুবেছে।

গত ২ জুন বিশ্বের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, নোবেলজয়ী, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি, রাষ্ট্রসঙ্ঘের প্রাক্তন মহাসচিব, প্রাক্তন দুই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী সহ আন্তর্জাতিক স্তরের ২২৫ জন মানুষ চিঠি লিখেছেন জি-২০ গোষ্ঠীর প্রধানদের। তাঁদের উদ্বেগ, বিশ্বে নতুন করে ৪৪কোটি মানুষ দারিদ্র সীমার নীচে চলে যাচ্ছেন। ২৬ কোটি ৫০ লক্ষ তীব্র অপুষ্টির মুখে। এর মধ্যে রয়েছে প্রধানত শিশুরা। কঠিন ভবিষ্যৎ!
এইজন্যই বারবার সতর্ক বার্তা উচ্চারণ করে অমর্ত্য সেন, অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়রা বলছেন মানুষের হাতে নগদ টাকা দিতে হবে।
মানুষ বাজারে জিনিস কিনবে। বাজার সচল হবে অর্থনীতির অচলায়তন নড়ে উঠবে। পাশাপাশি মানুষ খেতে পাবে। ইতিমধ্যে করোনার প্রতিষেধক বা ওষুধ আবিষ্কার হয়ে যাবে। পৃথিবী আবার আগের মতো রৌদ্রোজ্জ্বল দিন নিয়ে হাসবে। নো বিকল্প!

                              ছবি সৌজন্যে : জি নিউজ