চৈতন্য মহাপ্রভু'র নামে নব নির্মিত তোরণ উদ্বোধন কাটোয়ার দাঁইহাটে

আন্তর্জাতিক যোগা দিবস


আন্তর্জাতিক যোগা দিবস

 🔸 সৌরমী রক্ষিত

  "শরীর মন সুস্থ রাখতে ভাই
   যোগার বিকল্প আর নাই।"

 ➡️  লাইনটি ছোট হলেও এর গুরুত্ব এবং পরিধি কিন্তু বিশাল। সত্যিই আজকের এই কঠিন পরিস্থিতিতে শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ থাকতে হলে যোগার অভ্যাস করতেই হবে।
আজ ২১শে জুন- পৃথিবী জুড়ে পালিত হচ্ছে বিশ্ব যোগা দিবস। UNGA(United Nations General Assembly) তে ২০১৪ সালে ২৭ শে সেপ্টেম্বর এক সভায় আমাদের প্রধানমন্ত্রী  নরেন্দ্র মোদী এই ২১ শে জুন তারিখে বিশ্ব জুড়ে যোগ দিবস পালন করার প্রস্তাব দেন এবং পরের বছর অর্থাৎ ২০১৫ সাল থেকেই এই দিনটি আন্তর্জাতিক যোগা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

              ২১ শে জুন পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধ সূর্যের দিকে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকে থাকে এর ফলে সূর্যকিরণ কর্কটক্রান্তি রেখার উপর লম্বভাবে পড়ে তাই উঃ গোলার্ধে দিন সবচেয়ে বড় এবং রাত সবচেয়ে ছোট হয়  আর দঃ গোলার্ধে ঠিক এর বিপরীত ঘটনা ঘটে। এই দিনে সূর্যের উত্তরায়ণের শেষ দিন। তাই এই দিনটিকেই যোগা দিবস হিসাবে পালন করার জন্য নির্ধারণ করা হয়। যোগা দিবস পালনের মূল লক্ষ্য-ই হল  যোগার উপকারিতা বিষয়ে মানুষকে অবগত করা এবং সবার মধ্যে যোগার অভ্যাস তৈরী করে রোগমুক্ত এবং মানসিক চাপমুক্ত জীবন পেতে সাহায্য করা।

যোগা আসলে কী? - সংস্কৃত 'যুজ' ধাতু থেকে উৎপন্ন যোগ শব্দটির অর্থ হল যুক্ত করা বা ঐক্যবদ্ধ করা। অর্থাৎ কিনা সহজ কথায় আমরা বলতে পারি যোগার মাধ্যমে ব্যক্তি সত্তার সাথে বিশ্বসত্তার যোগ অর্থাৎ সম্বন্ধ স্থাপিত হয়। যোগা মানেই শুধু শারীরিক কসরৎ নয় এটি হল আসলে শরীর, মন ও আত্মার ক্রম উন্নয়নের পদ্ধতি। এই যোগের ধারণাটি কিন্তু আধুনিক নয়  প্রায় ৫০০০ বছরের পুরোনো। হিন্দুধর্মের পাশাপাশি বৌদ্ধ, জৈন ধর্মগ্রন্থগুলিতেও যোগার উল্লেখ পাওয়া যায়। যোগগুরু মহর্ষি পতঞ্জলি তার 'যোগসূত্র' গ্রন্থে যোগার বিভিন্ন দিকের কথা তুলে ধরেছেন। যম, নিয়ম, আসন, প্রাণায়াম, প্রত্যাহার, ধারণা, ধ্যান ও সমাধি এই আটটি হল যোগের অঙ্গ। কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে এই আটটি অঙ্গই অভ্যাস করা হয়তো আমাদের সবার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই সুস্থ শরীর ও একটি সুন্দর মন পাওয়ার জন্য আমরা প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় বের করে কিছু যোগাসন ও প্রানায়ামের অভ্যাস করতে পারি।

  আমরা ছোট থেকে শুনে আসছি যে প্রাচীন কালের মুনি ঋষিরা দুর্গম জায়গায় ধ্যানমগ্ন হতেন, কখনও  খালিগায়ে বরফাবৃত জায়গায় একপায়ে দাঁড়িয়ে থাকতেন - এই সব অলৌকিক শক্তির আধার হলো নিয়মিত ও কঠিন যোগসাধনা।
নিয়মিত যোগাসন অভ্যাস করলে শারীরিক ও মানসিক ভারসাম্য বজায় থাকে। শরীরে জমে থাকা বিষ(টক্সিন) দূরীভূত হয়।  দেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ যেমন-  পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত্র,  বৃহদন্ত্র, যকৃৎ - এর ক্রিয়া সঠিক ভাবে সম্পন্ন হয় যার ফলস্বরূপ হজম শক্তি বৃদ্ধি পায় ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। এখন বেশিরভাগ মানুষ কোমর, ঘাড় ও স্নায়ুর  বিভিন্ন সমস্যায় ভোগেন- এর থেকে মুক্তির একটি উপায় হল যোগাভ্যাস। আমাদের শরীরের বিভিন্ন বহিঃক্ষরা ও অন্তক্ষরা গ্রন্হির নিঃসরণ স্বাভাবিক রেখে বিভিন্ন ব্যাধির হাত থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে এই যোগা।

এখনকার দিনে মানুষ বড় বেশি আত্মকেন্দ্রিক। সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাডিকশন মানুষকে সবার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। এর কুফল হিসেবে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে মানসিক অবসাদ এবং বিভিন্ন অনভিপ্রেত ঘটনা যা হৃদয়কে ব্যথিত করে। তাই  অবসাদ, মানসিক চাপ বা হতাশা যাই হোক না কেন, এগুলির ঔষধ হিসেবে যোগা খুবই কার্যকরী।
     শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে, স্মৃতিশক্তি-একাগ্রতা-মনঃসংযোগ বৃদ্ধি করতে, শরীরের অস্থি- পেশীর জোর বাড়াতে, বুকের খাঁচার গঠন ঠিক করতে, মানসিক বিকাশে এবং সর্বোপরি রোগমুক্ত স্বাস্থ্য পেতে যোগা এক এবং অদ্বিতীয়।  সব বয়সের মানুষ তার শারীরিক সামর্থ্য অনুসারে যোগাভ্যাস করতে পারে।


কয়েকটি আসনের নাম এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যেগুলি প্রতিদিন বাড়ীতে খুব সহজেই অভ্যাস করা যায় - বীরাসন, তারাসন, পদ্মাসন, বজ্রাসন, উষ্ট্রাসন, ভূজঙ্গাসন, শলভাসন, নৌকাসন, বক্রাসন, অর্ধবদ্ধমৎসেন্দ্রাসন, ভেকাসন, বৃক্ষাসন, মকরাসন, শবাসন ইত্যাদি। এই আসনগুলোর নাম যতটা কঠিন অভ্যাস করা কিন্তু ততটা কঠিন নয়।  তবে মনে রাখতে হবে আর সবকিছুর মতই এটাও নিয়মিত অভ্যাসের প্রয়োজন তবেই এর সুফল পাওয়া যাবে। অনেক কর্কট রোগে আক্রান্ত রোগীরা  চিকিৎসার পাশাপাশি  যোগাভ্যাসের দ্বারা এই রোগটিকে প্রশমিত করতে পেরেছে। তবে একটা কথা আমাদের মনে রাখতে হবে যে নিজে নিজেই ঠিক করে আসন করতে যাওয়া একদমই উচিত নয়। নির্দিষ্ট কিছু কিছু রোগের ক্ষেত্রে কিছু আসন করা নিষেধ। তাই একজন যোগ প্রশিক্ষকের পরামর্শ অনুযায়ী আসন করাই শ্রেয়।
বর্তমানে এই মহামারীর সময়ে গৃহবন্দী আমরা সকলেই। আমরা সকলেই এই যুদ্ধের যোদ্ধা। তবে এই সময় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে শুরু করে আয়ুশ মন্ত্রক এবং  চিকিৎসা মহলের সঙ্গে যুক্ত সকলেই যোগার উপরে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে সকলের সুরক্ষার কথা (Social distancing) মাথায় রেখে বিশ্ব যোগা দিবস- কে সাফল্য মণ্ডিত করার জন্য ভারত সরকারের অধীনস্থ আয়ুশ মন্ত্রক বিভিন্ন অনলাইন কর্মসূচির আয়োজন করেছে। এই বছর আন্তর্জাতিক যোগা দিবসের থিম হলো- "Yoga at home and yoga with family". সাড়ম্বরে যোগা দিবস পালন করা তখনই সার্থক হবে যখন বেশীরভাগ মানুষ এটির উপকারিতা বুঝবে ও তার বাস্তবায়ন ঘটাবে।
আজ এই শুভ দিনে আসুন আমরা শপথ নিই নিয়মিত যোগাসন অভ্যাসের মাধ্যমে আমরা নিজেদের শরীর, মনকে সুস্হ রাখার পাশাপাশি এই সমাজকেও সুস্হ ও সুন্দর করে তুলব।