Scrooling

হাঁপানি ও অ্যালার্জিজনিত সমস্যায় ভুগছেন ? বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ অয়ন শিকদার আগামী ২৫ আগস্ট বর্ধমানে আসছেন। নাম লেখাতে যোগাযোগ 9734548484 অথবা 9434360442 # টি টোয়েন্টি ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট ২০২৪ : ভারতের বিশ্ব রেকর্ড, প্রথম থেকে শেষ সব ম্যাচে ভারতের জয় # কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন আউসগ্রামের বিউটি বেগম # নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রীসভায় পশ্চিমবঙ্গ থেকে শপথ নিলেন ডঃ সুকান্ত মজুমদার ও শান্তনু ঠাকুর # আঠারো তম লোকসভা ভোটের ফলাফল : মোট আসন ৫৪৩টি। NDA - 292, INDIA - 234, Others : 17 # পশ্চিমবঙ্গে ভোটের ফলাফল : তৃণমূল কংগ্রেস - ২৯, বিজেপি - ১২, কংগ্রেস - ১

শ্রদ্ধাঞ্জলি : বাসু চ্যাটার্জি


শ্রদ্ধাঞ্জলি : বাসু চ্যাটার্জি

 ✳ শিবানন্দ পাল

 ➡ বাসুদার কথা পড়ছিলাম। বাসু চ্যাটার্জি ... সুযোগ পেলেই ওঁর ছবি অবশ্যই দেখতাম। 'রজনীগন্ধা ফুল তুমহারে' ... রজনীগন্ধা-র গান এখনো কানে লেগে আছে। কি সব গান আমাদের উপহার দিয়েছেন ভাবা যায়না!
'রিমঝিম গিরে শাওন' ... রজনীগন্ধা-র কথা তো বললাম, রজনীগন্ধার আর একটা গান আছে। সেটা মুকেশজীর গলায়।―'ক‌ই বার য়ু ভি' ... মারভেলাস! তাছাড়া ... 'জানে মন জানে মন' তারপর ... 'গোরি তেরা গাও', ... 'যব দীপ জ্বলে চলে আনা' কত নাম সব আজকাল মনে থাকে না।
বাসু চ্যাটার্জি মুম্বাইয়ের বাঙালি ঘরানার একটা পিলার চলে গেলেন। আসলে স্মৃতি একটু পিছন দিকে টানছে। ১৯৭৫-এ বোম্বে যেতে হয়েছিল। তখন মুম্বাই 'বোম্বাই' ছিল। ওই সময় উত্তমকুমারের 'অমানুষ' আর ধর্মেন্দ্র-অমিতাভর 'শোলে' রিলিজ করেছিল প্রায় এক‌ই সময়ে।
যেখানে থাকতাম সেখানে সিনেমা হলগুলোই স্থানীয় অধিকাংশ মানুষের আয়ের মুখ্য উৎস ছিল। কাছাকাছি পাঁচ-ছ'টা সিনেমা হল। সকাল আটটা থেকে কোনোটায় না কোনোটায় শো শুরু হতো। শেষ নাইট শো ভাঙতো প্রায় রাত সাড়ে বারোটা একটায়।
২৪ ঘন্টাই জীবন ঘুরতো। পুরনো ছবি দেখার ইচ্ছে হলে পুরনো ছবির নির্দিষ্ট হল ছিল। কর্মস্থলের কাছাকাছি দুটি হলে চলছিল অমানুষ আর শোলে।
মদের বোতল মাথায় উত্তমকুমারের বিশাল 'কাট আউট', আর শোলের বিশাল 'কাট আউট' গব্বর সিংয়ের পায়ের ফাঁকে বাসন্তী পড়ে আছে, নাচ করতে করতে। ধর্মেন্দ্র অমিতাভের চেয়ে গব্বর সেসময় আলোচনার তুঙ্গে। 'বিপিনবাবুর কারন সুধা' ... গুরুর জবাব নেই।
এর‌ই ফাঁকে একটা হলে চলতো 'রজনীগন্ধা'! চুপচাপ, কোনো হৈ হট্টগোলের ব্যাপার ছিল না। চার পাঁচবার ছবিটি দেখেছিলাম। একটা মিষ্টি আকর্ষণ ছিল। যতবার দেখেছি ... বেশিরভাগ ইভিনিং আর নাইট শো'য়ে .. হল ভর্তি হতো না ... কিন্তু ভালো দর্শক ছিল। ছবির শেষে প্রায় সবাই গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে হল থেকে বের হতো। একটা মুগ্ধতা যেন সবাইকে স্নান করিয়ে দিত।

যে কথাটা লিখবার জন্য এই পোস্ট। সেসময়‌ও বম্বেতে থাকার জায়গার খুব সমস্যা ছিল। একটা স্থায়ী বাসার খোঁজ চলছিল। বন্ধু রজত খান্না স্টুডিওতে বিয়ার সাপ্লাইয়ের কাজ করতো। সে খবর দেয় মালাড-এ কম টাকায় ঘর মিলবে। এক রবিবার ছুটির দিন সকাল সকাল চার্চগেট থেকে ট্রেনে চেপে মালাড নামলাম। রজত স্টেশনেই অপেক্ষা করছিল।
আমার সঙ্গে ছিলেন আমার ছোটমামা আত তাঁর এক বন্ধু সুভাষ মামা। ওঁর জন্যেই আমার বম্বে যাওয়া। ওঁরা আমার থেকে চার-পাঁচ বছরের বড়। আমাদের সম্পর্ক এখনো বন্ধুর মতো।
রজত আমাদের ঘর দেখালো একটা উঁচু টিলার ওপর পাকা ভিতের ওপর করোগেটেড শিটের ছাউনি ঘেরা ঘর। মাসিক তিন হাজার টাকা ভাড়া। ছাদ ঢালাইয়ের কাজ চলছে দু-তিন মাসের মধ্যে হয়ে যাবে। আশেপাশে প্রচুর বিল্ডিং তৈরি হচ্ছে। আশেপাশে এরকম বাড়ি ঘরেই দেখা গেল প্রচুর, সেখানে বহু পরিবার থাকছে। স্টেশন থেকে দূরত্ব এমনকিছু নয়। হাঁটা রাস্তা।
ফিরবার সময় রজতের পরিচিত একজন সামনে পড়ল। তার সঙ্গে কথায় কথায় জানা গেল আমরা দেবেন বর্মা-র বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছি। রজত আমাদের সেই বাড়িতে নিয়ে গেল। বিশাল বাড়ির বিশাল গেট পেরিয়ে প্রবেশ করলাম ভিতরে। দু তিনটি গাড়ির পাশ কাটিয়ে গাড়ি বারান্দার মতো একটা জায়গা। তার নীচে তিন চারজন টেবিল চেয়ারে সোফায় বসে আছেন ছুটির মেজাজে। আড্ডা চলছে। রজত ওদের সকলেরই প্রায় মুখ চেনা। দেবেন বর্মাকে আমাদের পরিচয় দিল।
দেবেনজী আমাদের সবার সঙ্গে দাঁড়িয়ে করমর্দন করে বসতে বললেন।
আমরা বাঙ্গালি। আমি আবার বম্বেতে নতুন এসেছি। দেবেন বর্মাকে ছবিতে মজার চরিত্রে অভিনয় করতে দেখি, বাস্তবে আরো মজাদার মানুষ। দেবেন বার্মা এবার পরিচয় করিয়ে দিলেন ইনি হচ্ছেন রাধু কর্মকার! আঙুল তুলে সামনের একটা বাড়ি দেখালেন ... ওইটে ওনার বাড়ি! আমরা হলাম পড়শী। চেয়ে দেখলাম বাড়িটা। খুব একটা চাকচিক্য দূর থেকে মনে হল না। তবে প্রচুর গাছপালা রয়েছে বোঝা গেল।
রাধু কর্মকারের নামটা শুনেছি শুনেছি ... কিন্তু মনে করতে পারছি না ... কোন ছবিতে ওঁকে দেখেছি! দেবেন বর্মা মনে করিয়ে দিলেন ... উনি হচ্ছেন রাজকাপুরের ক্যামেরাম্যান!

চমকাবার তখনও বাকি! বর্মাজী তারপর একজন চনমনে শার্প সিনেমার হিরোর মতো চেহারার মানুষের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য বললেন, ইনি হলেন দ্য গ্রেট বস! বাসুজী! ... বাসু চ্যা-টা-র্জি! আমাদের তখন ভিরমি খাওয়ার অবস্থা!