চৈতন্য মহাপ্রভু'র নামে নব নির্মিত তোরণ উদ্বোধন কাটোয়ার দাঁইহাটে

করোনা পরিস্থিতিতে হালারার মা বিপত্তারিনির ব্রত


করোনা পরিস্থিতিতে  হালারার মা বিপত্তারিনির ব্রত


অতনু হাজরা, জামালপুর : করোনা আবহে পূজিত হলেন মা বিপত্তারিনি। তবে এবছর বন্ধ রইলো পূর্ব বর্ধমান জেলার জামালপুরের হালারার খুবই জাগ্রত দেবী মা বিপত্তারিনি মেলা। এই সংকটময় পরিস্থিতিতে দেশের প্রায় সব মন্দিরেই বন্ধ রয়েছে বিশেষ পূজা বা সেই উপলক্ষ্যে মেলা। আর এই করোনা পরিস্থিতিতেই এবছর হালারা বিপত্তারিনি মায়ের মেলাও হলো না। মন্দিরের পুরোহিত লক্ষ্মীনারায়ন চক্রবর্তী জানান তাঁরা আগে থেকেই বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের সহায়তায় এলাকায় প্রচার করেছিলেন যে এবারে মায়ের ব্রত পূজা কোনো ভক্তেরই নেওয়া হবে না। সেই মোতাবেক কোনো ভক্তসাধারণের  পূজা নেওয়া আজ হয় নি। মন্দির প্রাঙ্গনে রয়েছে জামালপুর থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী।


তবে আজ  মা বিপত্তারিণী দেবীর মাহাত্ম কথা কিছু পাঠকদের সাথে শেয়ার করবো। বর্তমান যিনি পুরোহিত লক্ষ্মীনারায়ন চক্রবর্তী তিনি আমাদের জানান তাঁদের সাত পুরুষের ঠাকুর এই দেবী মা। খুবই জাগ্রত এই মা। ভক্তজনের যেকোন মনোবাসনা তিনি পূরণ করেনই করেন। যার জন্য বহু দূর দূরান্ত থেকে অনেক ভক্ত আসেন এখানে পূজা দিতে। বিশেষ যে বিষয়টি সেটি হলো মা বিপত্তারিনি মায়ের মূর্তি একমাত্র হালারার এই মন্দিরেই আছে। যে মূর্তির ছবি তোলা কঠোর ভাবে নিষেধ। তাই বাজারে বিপত্তারিনি মায়ের যে ছবি বিক্রি হয় তার সাথে মায়ের মন্দিরের মূর্তির কোনো মিল নেই। ঠাকুরমশাই জানান পঞ্চমুন্ডি আসনে প্রতিষ্ঠিতা আছেন মা। সাতপুরুষ ধরে পুজো হলেও এই মায়ের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন বর্তমান পুরোহিতের দাদু যতীন চক্রবর্তী। যিনি ছিলেন এক সাধক মানুষ।কথিত স্বয়ং মা তাঁকে রান্না করে খাওয়ান। তারপর মায়ের স্বপ্নাদেশ পান তাঁদের বাড়ির পাশ দিয়েই বয়ে গেছে নদি (যদিও বর্তমানে সেটি ডি ভি সি খাল) সেই নদীতেই ভেসে আসবে একটি লোহার রড, সেই লোহার রড দিয়েই মায়ের মূর্তি তৈরি করার কথা বলেন স্বয়ং মা বিপত্তারিনি।


এখনো মন্দিরে গেলে দেখা যাবে মহাকাল অর্থাৎ নীচে ভগবান শিবের নাভিস্থল থেকে যে পদ্মের ডাঁটা উঠে গেছে সেটিই হলো সেই লোহার রড যা মায়ের স্বপ্নাদেশে নদী থেকে পেয়েছিলেন যতীন চক্রবর্তী। তার উপরে পদ্মফুলের সিংহাসনে বসে আছেন মা বিপত্তারিনি। অনেক কথাই প্রচলিত আছে এই দেবী মাকে নিয়ে। এখন যদি মন্দিরে যাওয়া হয় দেখা যাবে মন্দিরের পাশেই আছে বেদী ঘর।সেটিই আসলে মায়ের আদি বেদী। মূর্তি তৈরি হবার পর মূল মন্দিরে মাকে প্রতিষ্ঠা করা হয়। লক্ষ্মীনারায়ন বাবুর বাবা কালিদাস চক্রবর্তীও মায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই আদি বেদী সংলগ্ন জায়গা থেকে পেয়েছিলেন গুপ্তধন। বর্তমান সময়েও অনেকেই মায়ের কৃপা পেয়েছেন নানা ভাবে সেরকমই একটি ঘটনা বললেন পুরোহিতমশাই। কোনো এক বিত্তশালী ব্যক্তির বাচ্ছা মেয়ের নানা বিপদ থেকে রক্ষার জন্য একটি মাদুলি করে দেন এবং বলে দেন যে কোনো কারণে নিয়ম ভঙ্গ হলে মাদুলি কেটে পড়ে যাবে।যথারীতি একদিন সেই ব্যক্তি কাজে বেড়িয়েছেন তার সাথে দেখা হয় এক কুমারী মেয়ের যিনি তাঁকে বার বার বলছিলেন তাঁর মেয়ের অবস্থা খারাপ তিনি যেন বাড়ি যান। তাঁর মেয়ের মাদুলি খারাপ হয়ে গেছে এখুনি যেন 'নারান' (সেই সময়ের পুরোহিত এই নামেই পরিচিত ছিলেন)-এর কাছে গিয়ে মাদুলি নিয়ে আসেন। সেই কথা শুনে তিনি বাড়ি ফিরে এসে দেখেন একদম ঠিক কথা বলেছেন ওই মহিলা।


যিনি তাঁর সঙ্গে তাঁর বাড়ির কাছ পর্যন্ত এসেছিলেন কিন্তু পরে তাঁকে আর দেখা যায় নি। এরকম নানা কাহিনী প্রচলিত আছে এই দেবী মায়ের। ভক্তিভরে ডাকলেই মা ভক্তদের সকল মনোকামনা পূরণ করেন। মায়ের মন্দিরে গিয়ে মাতৃ মূর্তি দর্শন করলে সত্যিই প্রশান্তিতে মন ভরে যায়। তাই আজ মায়ের বিশেষ পূজার দিনে সকলে আমরা মায়ের কাছে প্রার্থনা করি মা যেন দ্রুত ভারত তথা পৃথিবীকে করোনা মুক্ত করেন। জয় মা বিপত্তারিনি।