চৈতন্য মহাপ্রভু'র নামে নব নির্মিত তোরণ উদ্বোধন কাটোয়ার দাঁইহাটে

২৫ শে জুন, তিরাশি


                                  ২৫ শে জুন, তিরাশি

                                  🔸 অভিজিৎ মিত্র


 ➡️ ১৯৮৩ র ২৫ শে জুন। আজ থেকে ঠিক সাঁইত্রিশ বছর আগে। আমি তখন ক্লাস থ্রি-র পুঁচকে ছোঁড়া। আমার ভাই তখনো জন্মায়নি। এখনো মনে আছে, ভারত ওয়েষ্ট-ইন্ডিজের বিশ্বকাপ ফাইনালের খেলা সেবার টিভি-তে দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম। নিজের বাড়িতেই। গোটা পাড়ায় মাত্র দুটো টিভি, তার ভেতর একটা আমাদের বাড়িতে। সে যুগে সেটা ছিল বেশ গর্বের বিষয়। তবে অনুমতি সব সময় নয়, মাঝে মাঝে পাওয়া যেত । চোখ খারাপ হয়ে যাবার ভয়ে তখনো ছোটদের সারাক্ষণ টিভি-র সামনে বসতে দেওয়া হত না। এটা এখনো মনে আছে, বিকেল গড়িয়ে সন্ধের মুখে আমার ছোটকাকার কলেজ পড়ুয়া বন্ধুরা টেপ চালিয়ে গানের সুরে নাচতে নাচতে সবাই মিলে বোম ফাটাতে শুরু করল। ভারত বিশ্বকাপ জিতেছে, সেই খুশিতে। আমিও সেই আনন্দে যোগ দিয়েছিলাম। খুব নেচেছিলাম। সামনে হাফ ইয়ার্লি পরীক্ষা থাকা সত্বেও বাবা মা সেদিন কিছু বলে নি। আমার বেশি আনন্দ হয়েছিল কারণ সেই বয়সে আমরা পাড়ায় ক্রিকেট খেললে কারো না কারো জানলার কাচ ভাঙত বা গাছের টব ভাঙত। তারা বাড়িতে নালিশ করলেই কদিন খেলা বন্ধ থাকত। সেদিন ভারত বিশ্বকাপ জেতার পর মনে হয়েছিল, এবার আর আমাদের রোজ ক্রিকেট খেলায় কেউ বাধা দিতে পারবে না।

এখন আর সেদিনের খেলার কোন দৃশ্যই মনে নেই। থাকার কথাও নয়। খুব ছোটবেলার কথা। যদিও পরে ইউটিউবের দৌলতে বহুবার সেটার রিপ্লে দেখেছি। ভিভ রিচার্ডসের ক্যাচ ধরার জন্য কপিলদেব-এর সেই বিখ্যাত দৌড়। মহিন্দার অমরনাথ বা রজার বিন্নির সেইসব দুর্দান্ত স্পেল। তবে হ্যাঁ, এটা মনে আছে, আমার ছোট্ট মনে সেদিন খুব দাগ কেটেছিল ক্রিকেটারদের দুধসাদা পোষাক আর সাদা সোয়েটার। আমাদের স্কুলেও যেহেতু সাদা জামা সাদা সোয়েটার পরে যেতে হত, তাই মনে হয়েছিল ওরাও নিশ্চই স্কুল থেকে পাশ করেই ক্রিকেট খেলছে। এখনো মনে আছে, আমার থেকে বছর দশেকের বড় ছোটকাকা খেলা দেখতে দেখতে বলেছিল, ওটা লন্ডন শহর। লন্ডনের টেমস নদী সেবার আমাদের ভূগোলে ছিল। সেজন্য আমার ছোট্ট মনে বেশ রোমাঞ্চ জেগেছিল। টেমস নদীর পাশে কোন এক স্টেডিয়ামে খেলা হচ্ছে। দারুন ব্যাপার!

আমাদের ছোটবেলায়, তখনো, ক্রিকেট জনপ্রিয় ছিল না। সবাই ফুটবল ভালবাসত। রেডিওয় মোহনবাগান ইস্টবেঙ্গল ম্যাচের ধারাভাষ্য ছিল তখনো বাঙালীর জীবনের পারদ। কিন্তু তিরাশি সালে ভারত বিশ্বকাপ জেতার এক বছরের ভেতর দেখলাম আমাদের শ্রীরামপুর স্পোর্টিং ক্লাবে নিয়মিত ক্রিকেটের কোচিং শুরু হল। তারপর একে একে অন্যান্য ক্রিকেটের ক্লাবও খুলতে লাগল। আমাদের বন্ধুরা কেউ কেউ সেখানে খেলতেও শুরু করল। আস্তে আস্তে ফুটবল ছাপিয়ে ক্রিকেট অনেক ওপরে উঠে গেল।

২০১৩ সালে ভারত সরকার শচিন তেন্ডুলকর-কে ক্রিকেটের জন্য ভারতরত্ন পুরষ্কার দিয়েছে। নিঃসন্দেহে শচিন ভারতীয় ক্রিকেটে খুব উজ্জ্বল তারা। একদম ওপরের দিকে। পরিসংখ্যান সেই কথাই বলে। নিজের সময়ে বিশ্বের এক নম্বর ব্যাটস্‌ম্যান ছিল। কিন্তু আমার চোখে শচিন নায়ক। মহানায়ক নয়। ভারতীয় ক্রিকেটের মহানায়ক যদি বলতেই হয়, তাহলে আমার মতে সেটা গাভাসকর এবং কপিলদেব। যাদের দৌলতে খেলা হিসেবে ভারতে ক্রিকেট এক নম্বরে উঠে এসেছে। ক্রিকেট খেলেও যে বিশ্বকে শাসন করা যায়, পৃথিবীর সমস্ত দেশের চোখে চোখ রেখে কথা বলা যায়, সেটা ওরাই শিখিয়েছেন। ওদের জন্যই ঘরে ঘরে বাচ্চারা ক্রিকেট খেলতে উৎসাহ পেয়েছে। এমনকি শচিনও। খুব একটা ভুল বলা হবে না, যদি বলি ১৯৮৩ র ২৫ শে জুন ছিল ভারতীয় ক্রিকেটে রূপকথা সৃষ্টির দিন।

আসুন, আজ সেই রূপকথা একটু সেলিব্রেট করি।

                                                             ছবি : উইকিপিডিয়া