চৈতন্য মহাপ্রভু'র নামে নব নির্মিত তোরণ উদ্বোধন কাটোয়ার দাঁইহাটে

পঙ্গপালের প্যানিক


পঙ্গপালের প্যানিক

 ✳ প্রতনু রক্ষিত

 ➡ আমরা বর্তমানে একটা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। একদিকে কোভিড-১৯ এর বাড়বাড়ন্ত আর অন্য দিকে উমপানের তান্ডব। এই জোড়া বিপত্তির মাঝেই দেশের উওর-পশ্চিম প্রান্তে আবার শুরু হয়েছে পঙ্গপালের আক্রমণ।

২০১৯ এর শেষ দিক থেকে আফ্রিকার ইথিওপিয়া, কেনিয়া ও সোমালিয়াসহ কয়েকটি দেশে আক্রমণ চালিয়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে পঙ্গপাল। এ বছরের শুরুতে পাকিস্তানে পঙ্গপালের আক্রমণে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর প্রকাশ্যে আসে।

যদিও পঙ্গপালের আক্রমণ একেবারে নতুন নয়। যুগ যুগান্তর ধরে পৃথিবীর নানা দেশে বিভিন্ন সময়ে এই পতঙ্গ ফসলের বিস্তর ক্ষতি করেছে। পিছন ফিরে তাকালে দেখতে পাওয়া যায় আমাদের দেশে সর্বশেষ আক্রমণ হয়েছিল ১৯৯৩ সালে। আর পশ্চিমবঙ্গে হয়েছিল ১৯৬১ সালে। তবে এই পতঙ্গের উল্লেখ বাইবেল, কোরান থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখনীতেও প্রকাশ পেয়েছে।

মরু অঞ্চল থেকে আসা অনেকটা ঘাসফড়িং জাতীয় ( ব্যবহারগত পার্থক্য) এই পতঙ্গ আসলে পলিফেগাস। এরা দলবেঁধে আসে। একেকটি ঝাঁকে এক হাজার কোটি পর্যন্ত পোকা থাকতে পারে এবং দিনে ২০০ কিলোমিটারের বেশি পথ অতিক্রম করতে পারে। তাদের যাত্রা পথে খাওয়ার উপযোগী সব ধরণের ফসল, গাছপালা ধ্বংস করে দিয়ে যায় তারা। বাতাসের গতিপথ ( এবং কিছু ক্ষেত্রে উষ্ণতা ) যেদিকে থাকে, পঙ্গপাল সেদিকে অগ্রসর হয়। কাজেই তারা সবসময়ই নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে যায় - এমন এলাকায় যেখানে বৃষ্টি হয়, অর্থাৎ শস্য উৎপাদনের জন্য আদর্শ জায়গা অর্থাৎ তাদের খাদ্য সমৃদ্ধ স্থান। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা'র তথ্য অনুযায়ী, একটি মাঝারি আকৃতির পঙ্গপালের ঝাঁক যে পরিমাণ ফসল ধ্বংস করতে পারে, তা দিয়ে আড়াই হাজার মানুষকে এক বছর খাওয়ানো সম্ভব। একটি পূর্ণ বয়স্ক পঙ্গপাল প্রতিদিন নিজের ওজনের সম পরিমাণ খাবার খেতে পারে। এফ.এ.ও (FAO) মতে এক বর্গকিলোমিটার আকারের পঙ্গপাল একসঙ্গে প্রায় পঁয়ত্রিশ হাজারেরও বেশি মানুষের একবছরের খাবার খেতে সক্ষম।


পঙ্গপাল আর্থ্রোপোডা পর্বের অর্থোপটেরা বর্গের প্রাণী। এরা বিভিন্ন প্রজাতির হয়ে থাকে। যেমন, মাইগ্রেটরি লোকাস্ট (লোকাস্টা মাইগ্রেটোরিয়া), ডেজ়ার্ট লোকাস্ট (শ্চিসটোসেরসা গ্রেগরিয়া), গার্ডেন লোকাস্ট (অ্যাকানথাক্রিস রুফিকরনিস) ইত্যাদি। এগুলো মধ্যে ফসলের পক্ষে সবথেকে ক্ষতিকারক হলো লোকাস্টা মাইগ্রেটোরিয়া।
এদের জীবনচক্রে তিনটি দশা দেখতে পাওয়া যায়। ডিম, নিম্ফ এবং পূর্ণাঙ্গ। কোন দশা কতদিন স্থায়ী হবে তা প্রজাতি ভেদে নির্ভর করে। তবে এদের জীবনকাল মোটামুটিভাবে দশ সপ্তাহ হয়ে থাকে। জীবন দশায় পঙ্গপাল মোট পাঁচ বার খোলক নির্মোচন করে ( ইনস্টার দশা)। পঞ্চম ইনস্টার দশার পরে এদের ডানা ধীরে ধীরে শক্ত হতে থাকে। তখন এরা ফ্লেডলিং নামে পরিচিত হয়। এই সময় এদের গায়ের রঙ ও পরিবর্তিত হয়। এর কিছুদিন পর থেকেই খাদ্য সংগ্রহ এবং প্রজননের জন্য উড়তে শুরু করে। এইসময় পঙ্গপাল দল বাঁধতে থাকে ( সোয়ার্ম), যা খুবই বিপদজনক।

পুরুষ পঙ্গপাল স্ত্রী পঙ্গপালের পেটের নিচের দিকে থাকা স্পার্ম স্যাকের ভিতরে বীর্য প্রদান করলে স্ত্রী ও সেখানে ডিম পাড়ে এবং ঐ স্যাকের ভিতরেই নিষেক সম্পন্ন হয়। নিষিক্ত ডিমগুলি শক্ত জমিতে গুচ্ছাকারে (এগপড) সঞ্চিত হয় এবং সপ্তাহ দুয়েক পর ডিম ফুটে নিম্ফ বের হয়। এই অবস্থায় তারা উড়তে পারে না, লাফিয়ে চলে কিম্বা মায়ের পিঠে চেপে দূরে খাদ্য উৎসের দিকে পাড়ি দেয়। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে সেরেটোনিন রাসায়নিক পঙ্গপালের মস্তিষ্কে প্রভাব বিস্তার করলে তাদের আচরণের পরিবর্তন ঘটে ও তারা আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে।

পঙ্গপালের আক্রমণ থেকে বাঁচার সঠিক কোনো নির্দিষ্ট উপায় এখনো পর্যন্ত অজানা রয়ে গেছে। তবে বিমানের মাধ্যমে বা ম্যানুয়ালি  কীটনাশক স্প্রে ( ডাইক্লোরভস, DDVP ), জোরে আওয়াজ করা এবং জমিতে বিশেষ প্রজাতির হাঁস ছেড়ে দেওয়ার ( জৈব নিয়ন্ত্রণ) মাধ্যমে কিছুটা রেহাই পাওয়া সম্ভব।