Scrooling

হাঁপানি ও অ্যালার্জিজনিত সমস্যায় ভুগছেন ? বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ অয়ন শিকদার আগামী ২৫ আগস্ট বর্ধমানে আসছেন। নাম লেখাতে যোগাযোগ 9734548484 অথবা 9434360442 # টি টোয়েন্টি ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট ২০২৪ : ভারতের বিশ্ব রেকর্ড, প্রথম থেকে শেষ সব ম্যাচে ভারতের জয় # কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন আউসগ্রামের বিউটি বেগম # নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রীসভায় পশ্চিমবঙ্গ থেকে শপথ নিলেন ডঃ সুকান্ত মজুমদার ও শান্তনু ঠাকুর # আঠারো তম লোকসভা ভোটের ফলাফল : মোট আসন ৫৪৩টি। NDA - 292, INDIA - 234, Others : 17 # পশ্চিমবঙ্গে ভোটের ফলাফল : তৃণমূল কংগ্রেস - ২৯, বিজেপি - ১২, কংগ্রেস - ১

লোকনাথ ব্রহ্মচারীর তিরোধান দিবসের আগে ফিরে দেখা পূর্ব জন্মস্থান বেড়ুগ্রাম

লোকনাথ ব্রহ্মচারীর তিরোধান দিবসের আগে ফিরে দেখা পূর্ব জন্মস্থান বেড়ুগ্রাম

 ✳ অতনু হাজরা

 ➡ বাবা লোকনাথ ব্রহ্মচারীর পূর্ব জন্মের জন্মস্থান জামালপুর ব্লকের বেড়ুগ্রাম। গত দুই দশক পূর্বে স্থানীয় উদ্যোগে এখানেই গড়ে উঠেছে লোকনাথ বাবার আশ্রম। প্রতিবছর ১৯ জৈষ্ঠ্য এই আশ্রমে বিপুলসংখ্যক মানুষের সমাগম ঘটে। এবছর করোনা সংকটে বিশ বছরের ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়ছে। সরকারি নির্দেশিকা মেনে বিভিন্ন আশ্রম ও মন্দিরের সঙ্গে বেড়ুগ্রামের লোকনাথ বাবার আশ্রমেও বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। যারফলে এবছর লোকনাথ ব্রহ্মচারীর তিরোধান দিবসের উৎসব নিভৃতেই উদযাপিত হবে। হাজার হাজার ভক্তকে এবছর বাবার করুনা পেতে বাড়িতে বসেই আরাধনা করতে হবে। আসলে লোকনাথ বাবার অমোঘ বানীতেই আপামর মানুষ আজ তাঁর চরণতলে আশ্রয়প্রার্থী। তাই সেই ১৯ শে জৈষ্ঠ্যর আগে মহাযোগীর আগমন পথের স্মৃতি চারনায় এই প্রতিবেদন।

'রণে বনে জলে জঙ্গলে যেখানে বিপদে পড়িবে আমাকে স্মরণ করিবে আমি তোমাদের রক্ষা করিব'।

 শ্রীমৎ শুদ্ধানন্দ ব্রহ্মচারীর মতে পরমপুরুষ মহাযোগী ব্রহ্মচারী বাবা লোকনাথ জন্ম গ্রহন করেন আজ থেকে প্রায় ২৯০ বছর আগে ১৭৩০ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গের অবিভক্ত ২৪ পরগনা জেলার চৌরিশাচিকলা গ্রামে। বিবর্তনে চৌরাশিচাকলা থেকে  চকলা বর্তমানে চাকলাধাম নামেই বিখ্যাত। যদি বাবা লোকনাথের জন্মস্থান নিয়ে আদালতে মামলাও হয়েছিল। বাবা লোকনাথের পিতার নাম রামনারায়ন ঘোষাল আর মাতা ছিলেন কমলা দেবী। বাবা লোকনাথের জীবন তাঁর সাধনা, তাঁর বাণী আমরা কম বেশি সকলেই জানি বা বিভিন্ন বইয়ে আমরা পড়েছি। এখন আমি আলোচনা করবো বাবা লোকনাথের পূর্ব জীবন নিয়ে।
 অধুনা পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের দামোদর নদীর তীরে আছে শান্ত স্নিগ্ধ গাছপালায় ঘেরা একটি গ্রাম, যার নাম বেড়ুগ্রাম। বহু প্রাচীন ও বর্ধিষ্ণু গ্রাম এই বেড়ুগ্রাম। যেখানে বিভিন্ন বিখ্যাত মানুষ জন্ম গ্রহন করেছেন। যাঁরা অনেকেই ইতিহাসে ছাপ রেখে গেছেন। যেমন আচার্য্য গিরিশ চন্দ্র বসু সহ অনেকে। এই গ্রামেরই উত্তর পাড়ায় রয়েছে ব্যানার্জী পরিবার যেটা আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়। এই বেড়ুগ্রামেই বাবা লোকনাথ ব্রহ্মচারী তাঁর পূর্ব জন্মের শরীর ধারণ করেছিলেন। কিন্তু  প্রশ্ন হলো আমরা এই কথা কি নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি ? একথা আমরা লোকনাথ ব্রহ্মচারীর জীবনী পড়লেই জানতে পারবো। একটু আলোচনা করা যাক। গুরু ভগবান লোকনাথ ও বেণীমাধব কে নিয়ে গৃহত্যাগ করেছেন। তখন দুজনেরই উপনয়ন হয়েছে মাত্র। দুই বালক তাদের গুরুদেবের সাথে বেরিয়ে পড়লো পথে।গুরুর সাথে তখন তারা সাধনা করছে। গুরু ভগবান গাঙ্গুলি গড়ে নিচ্ছেন তাঁর দুই যোগ্য শিষ্যকে। তখন পদব্রজে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরা ও সাধনা এই তাদের কাজ। আর জীবন ধারণের জন্য যেটুকু প্রয়োজন সেটুকুই আহার গ্রহণ। দুই ব্রহ্মচারীর চলছে কঠিন ব্রহ্মচর্য সাধন ও নক্তব্রত পালন। এখন শুধু গুরুবাক্য পালনই তাদের প্রধান কাজ। একে একে অনেক গুপ্ত সাধনায় তারা সিদ্ধিলাভ করছে। এরকমই একদিন যখন লোকনাথ মাসব্রত ও সমাধিজপ করছে হঠাৎই তার পূর্বজন্ম স্মৃতি উদয় হলো। যখন দ্বিতীয়বার মাসব্রত উদযাপন করছে তখনই বাবা লোকনাথ মানসচক্ষুতে দেখতে পান এক অলৌকিক দৃশ্য। তিনি দেখেন দামোদর নদ বয়ে চলেছে আর তারই তীরে ছোট্ট একটা গ্রাম 'বেড়ুগাঁ'। তিনি দেখেন সেই গ্রামেই এক ব্রাহ্মন  পরিবারে তিনি বিরাজ করছেন সীতানাথ বন্দোপাধ্যায় নামে। সমাধি ভাঙার পর তিনি গুরুদেবকে তাঁর এই স্মৃতির কথা জানান। গুরুদেব তাড়াতাড়ি একটি কলম দিয়ে তাঁকে তাঁর অনুভূতি ও স্মৃতিগুলো লিখতে বলেন।


এই ঘটনা ঘটে যাবার  কিছুদিন পর ভ্রাম্যমান অবস্থায় এই দামোদর নদের তীরে এসে পৌঁছান। এখানে আসার পরই বাবা লোকনাথের মধ্যে এক পরিবর্তন লক্ষ্য করলেন গুরুদেব। তিনি লোকনাথকে বলেন এই জায়গা তাঁর চেনা কিনা? উত্তরে লোকনাথ জানান এই জায়গার কথাই মাস ব্রত পালনের সময় লিখে দিয়েছিলেন। সেই দামদরের তীরে এসে এখন তাঁরা পৌঁছেছেন। সামনে এগিয়ে গেলেই বেড়ুগাঁ খুঁজে পাওয়া যাবে। গুরুদেব আশ্চর্য হয়েগেলেন যে এখানকার পথ চিনতে লোকনাথের কোনো অসুবিধাই হচ্ছে না। যেন কত দিনের চেনা তার এই জায়গা। গ্রামে ঢুকে প্রথমেই বাবা লোকনাথ তাঁর বাস্তুভিটের দিকেই আগে যান। গুরুদেব শিষ্যের  মানসচক্ষুতে যে দর্শন হয়েছিল তার সত্যতা প্রমাণের জন্যই এখানে এসেছেন। তিনি গ্রামের বয়স্ক মানুষদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন লোকনাথ যা লিখেছে সবই সত্য। এখনো তাদের বংশধরেরা সেই ভিটেতে বসবাস করছে। আর জানা যায় যে তিনি পুর্ব জীবনে পরিবারের কনিষ্ঠ সন্তান ছিলেন। সেসময় তিনি দিনের বেশিরভাগ সময়ই লোকচক্ষুর অন্তরালে আত্মমগ্ন হয়ে থাকতেন। এক্ষেত্রে একটি কথা বলা প্রয়োজন আমরা অনেকসময় এক শ্রেণীর জাতিষ্মরের কথা শুনে থাকি যাদের পূর্ব জন্মের কথা স্মরণ আছে এবং যা প্রায় সবটাই মিলে যায়। বাবা লোকনাথ কিন্তু এই পর্যায়ের জাতিস্মর ছিলেন না। তিনি ছিলেন 'সংস্কার সাক্ষাৎ করনাত পূর্বজাতিজ্ঞানম' মানে যোগী অখন্ড ব্রহ্মচর্য পালন পূর্বক একাগ্র মনে ধারণা ধ্যান এবং সমাধি যখন মনের গভীরের সংস্কারের উপর করেন, তখন স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাঁর স্মৃতিপটে ভেসে ওঠে পূর্বজন্মের বহু স্মৃতি। সেই শ্রেণীর সাধক ছিলেন বাবা লোকনাথ।
আবার আমরা ফিরে আসি বর্তমানের বেড়ুগ্রামে। বাবার পূর্ব জন্মের জন্মস্থান বেড়ুগ্রামে কিন্তু সেইভাবে লোকনাথ বাবাকে নিয়ে সেভাবে কারোর আগ্রহ দেখা যায়নি। বর্তমানে বেড়ুগ্রামে বাবা লোকনাথ মন্দিরের ট্রাস্টির যিনি সভাপতি সেই সঞ্জয় হাজরার কাছ থেকে জানতে পারলাম যে উনিই লোকনাথ বাবার একজন একনিষ্ঠ ভক্ত তিনি বহুবার চাকলায় বাবার আশ্রমে গিয়ছেন। তিনি কলকাতায় স্বামী শুদ্ধানন্দ ব্রহ্মচারীর যে লোকনাথ ডিভাইন আশ্রম রয়েছে সেখানে গিয়ে তাঁর মুখ থেকেই শোনেন বাবার পূর্ব জন্মের জন্মস্থানের কথা। সেই  থেকেই শুরু ধীরে ধীরে  গ্রামবাসীদের নিয়ে ১৯৯৮ সালে গ্রামের জমিদার বাড়িতে প্রথম লোকনাথ বাবাকে প্রতিষ্ঠা ও উৎসব পালন করা হয়। বর্তমানে যে জায়গায় বাবার মন্দির সেটি ২০০১ সালে ছিঁটেবেড়া দিয়ে তৈরি করা হয়। ধীরে ধীরে এলাকা ছাড়িয়ে দূর দুরান্তে ছড়িয়ে পড়তে থাকে বাবার পূর্বজন্মের স্থান বেড়ুগ্রামের এই আশ্রমের কথা। প্রতিবছর ১৯ শে জ্যৈষ্ঠ বাবার তিরোধান দিবসে খুব ধুমধাম করে উৎসব পালন করা হয়। বর্তমানে বাবার মন্দির ছিঁটেবেড়ার বদলে পাকা হয়েছে, পুরো মন্দির এলাকা প্রাচীর দিয়ে ঘেরা হয়েছে। মন্দিরের বাইরে উল্টো দিকে রয়েছে পুরোহিতদের থাকার ঘর, বাবার ভোগরান্নার ঘর ও অথিতিশালা। যদিও অথিতিশালা খুবই ছোট তবুও দু'চারজন মানুষ এখানে এসে অনায়াসে থাকতে পারবেন। মন্দির ট্রাস্টির সভাপতি বলেন তাঁদের ইচ্ছা এখানে একটা বৃদ্ধাশ্রম করার। মন্দিরের ট্রাস্টি ছাড়াও গ্রামের মানুষসহ বাইরের বাবার অসংখ্য ভক্তর দানেই চলছে বাবার নিত্যপূজা ও ভোগ নিবেদন। সকালে ৯.৩০ মিনিটে একবার পুজো হয় তারপর দুপুর ১২ টায়  বাবাকে অন্ন ভোগ নিবেদন করা হয়, আবার সন্ধ্যায় শীতল দিয়ে বাবাকে শয়ন দেওয়া হয়। যেকোনো দিন অগ্রিম জানানো থাকলে খুব স্বল্প মূল্যে বাবার ভোগ যে কেউ পেতে পারেন। ১৯ সে জৈষ্ঠ্য বাবার তিরোধান দিবসে প্রায় ২০ থেকে ৩০ হাজার জনসমাগম হয়। খুব শান্ত, স্নিগ্ধ মনোরম পরিবেশে বাবার এই মন্দির। এখানে কিছুক্ষণ বসলে সত্যি মনে শান্তি আসবে। অন্নভোগ ছাড়াও বাবার পুজোয় মিছরি, চিনি ও লজেন্স প্রসাদও দেওয়া হয়। কোনো সরকারি সাহায্য এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায়নি বলেই সঞ্জয় বাবু জানান। আমরা কথা বলেছিলাম সেই বন্দোপাধ্যায় পরিবারের সাথেও যে পরিবারেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন সীতানাথ রূপে বাবা লোকনাথ। সেই পরিবারেরই এক বংশধর দেবব্রত বন্দোপাধ্যায় জানান তাঁরা বংশ পরম্পরায় জানেন যে তাঁরাই বাবা লোকনাথের পূর্ব জন্মের বংশধর। তাঁদের সঙ্গে নাকি চাকলা থেকেও যোগাযোগ করা হয়েছিল।
জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মেহেমুদ খান জানান এটা খুবই গর্ব সম্মানের ব্যাপার যে বেড়ুগ্রামে একজন বিখ্যাত যোগী ও মহাপুরুষ লোকনাথ ব্রহ্মচারীর পূর্ব জন্মের জন্মস্থান। তিনি জানান পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকে সেখানে মাটির রাস্তার পরিবর্তে পাকা পিচরাস্তা করে দেওয়া হবে এবং এবিষয়ে আলাপ আলোচনা চলছে। পূর্ত কর্মাধক্ষ্য ভুতনাথ মালিক যিনি আবার এখানকারই বাসিন্দা। তাঁকে জানতে চাওয়া হয় তিনি কি ভাবছেন এই ধর্মীয় স্থানটি নিয়ে। তিনি জানান মন্দির কর্তৃপক্ষ তাঁর কাছে কাগজ পত্র  জমা দিয়েছেন তিনি সেটা ঠিক জায়গাতেই জমা করে দিয়েছেন, তিনি আশা করছেন নিশ্চিত কিছু অনুদান পাওয়া যাবে। জামালপুরের বি ডি ও শুভঙ্কর মজুমদার জানান তিনি পর্যটন দপ্তরে জামালপুরের বেড়ুগ্রাম ও কুলিনগ্রাম এই দুটি জায়গার সব ডিটেলস জমা দিয়েছেন। তিনি সেখানে একটি অতিথি নিবাস করে দেবার কথা বলেন।
প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখি বেড়ুগ্রাম বাবা লোকনাথ মন্দিরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ১৯ শে জ্যৈষ্ঠ বাবার তিরোধান দিবসে যে উৎসব বা অনুষ্ঠান করা হত তা এবছর করোনা সংক্রমণের জন্য পুরো বন্ধ রাখা হচ্ছে। শুধুমাত্র বাবার বিশেষ পুজোই সেদিন হবে। বাবার ভক্ত সাধারণ যেন সেদিন সেখানে ভিড় না জমান। সবদিক থেকে দেখে বলা যায় আগামী দিনে একটি বড় তীর্থক্ষেত্রে পরিণত হতে চলেছে বেড়ুগ্রাম।