দুই ভারতের লড়াই !
✳ রাধামাধব মণ্ডল
➡ কে যেন দৈব বাণী করেছেন, পৃথিবীর ওজোনস্তরের ক্ষত এই লক ডাউনে সেরে গেছে। প্রকৃতি বাঁচানোর লড়াই করতে লক ডাউনের গুরুত্ব কতোটা তা নিয়ে সংবাদ মাধ্যমের অনেকেই রে রে ফেলেছে লেকের জলের স্বচ্ছতা , গঙ্গার দূষণ কমার মতো নানা বিষয় তুলে। আমরা মাসে তিনশো টাকা দিয়ে, সে সব বাড়ি বসে দেখছি আর অর্থনৈতিক গাড্ডায় পড়েছি। আর গিনিপিগ হয়ে কাটাচ্ছি অফুরন্ত সময়। গিনিপিগ কেন ? লক ডাউন শুরুর দিকে, কম্পিটিশন করে সংবাদ মাধ্যমে দেখাতে শুরু করে ভ্যাকসিন তৈরির গপ্পো। কিন্তু সে-তো গিনিপিগই হলুম! এই করোনা কালে মৃত্যুর আগেই আর এক মৃত্যুর মুখে আমরা। অর্থনীতি নিয়ে গুরুগম্ভীর আলোচনা করছি, বলছি অথচ প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় দিন দিন বাড়ছে জিহ্বার স্বাদ। নিজেরা ভালো থাকার জন্য সেই আমরাই যারা কার্ড দিয়ে গায়ক, মঞ্চ দিয়ে লেখক, রং দিয়ে শিল্পী করেছি! সেই আমরা বলছি একথা তো ? সেই আমরাই সাধকের জন্য মেলা, আশ্রম, মচ্ছব খাওয়ানোর আয়োজন করি, আবার বাউল তৈরি করতে সূতিকাগৃহ নির্মাণ করে কমিটি করে দি। বাউলের অঙ্গরাগ সাজাতে স্ত্রী বর্জিত অন্য নারীসঙ্গ উপভোগে নিজেকে বাউল বলি। বাউলদের ফাউন্ডেশন গড়ি। সেই আমরাই লক ডাউন করেছি, করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে। মানবসভ্যতা বাঁচাতে চাল, ডালের ব্যবস্থা করছি। সেখান থেকে চাল, ডাল নিয়ে আসছি বাড়িতে। নিজে বাঁচছি, অন্যকে বাঁচাতে চাইছি।
সেই আমরাই প্লেনে চাপিয়ে করোনা এনেছি দেশে। প্রশ্ন করুক যতই , কে কার উত্তর দেয়। সমান্তরাল জিহবা রেখে এগিয়ে চলেছি। এখনও আমরাই আমাদের একদল প্রবাসী ভারতবাসীকে উড়িয়ে আনছি দেশে। আর আমার ভারতবর্ষ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে অজস্র আর একদল নিরন্ন ভারতবাসী, হতদরিদ্র ভারতবাসী, পরিবার নিয়ে যারা হাজার হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিচ্ছেন পায়ে হেঁটে, রেললাইন ধরে কিংবা বাস রুটে দীর্ঘ পথ হেঁটে, তাদের জন্য অপেক্ষা করছে অন্য ভারত। ফ্লাইট নেই, গাড়ি নেই, আগামীর পথচলা, ভবিষ্যৎ নেই তাদের জন্য। এই নিরন্ন ভারতবর্ষকে ঘিরে রেখেছে আর এক ভারত, সে ভারত বিজয় মালিয়ার ভারত। এই ভারতবর্ষের এতো বড়ো অসহায় অবস্থা, এপ্রজন্মের কেউ আগে দেখেনি।
এই সময়ে একদল ক্ষমতাশালী ভারতবাসীর উচিত, আর একদল গ্রামীণ ভারতবাসীর পাশে দাঁড়িয়ে কৃষি কাজে গতি আনা। তাদের সাহায্য করলেই, আপনি বাঁচতে পারবেন। বাঁচবে আগামী দিনে সৌখিন ভারতও।
একজন দেহজীবী এই করোনা কালে বড়ো সঙ্কটে রয়েছেন। কোনো পথ নেই তার সামনে খোলা। দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে, তাদের পেটে মোচড় দিতে শুরু করেছে খিদে। বাংলার মাধুকরী জীবী ফকির, বাউল, আখড়াধারী বাবাজি-বৈষ্ণব, নাম নামের শিল্পীরাও; এই ভারতবর্ষের চোখে দেখছে আর এক ভারত বর্ষকে। যেখানে এক ভারত কবিতার, অন্যটি গদ্যের।