মহামারীর আবহে ঈদ : প্রাসঙ্গিক কিছু কথা
✳ ইমতিয়াজ আলি মিদ্যা
➡ বিশ্বব্যাপী মহামারী করোনা যখন দাপট দেখাচ্ছে ঠিক তখনই খুশির উৎসব ঈদ এসে হাজির। ঈদ বা ঈদুল ফিতর সমগ্র মুসলমান সমাজের কাছে সর্ব বৃহৎ এবং অত্যন্ত আনন্দের এক উৎসব। আরবি রমজান মাসের সমগ্র মাস ব্যাপী চলে রোজা রাখা বা উপবাস পালন। অত্যন্ত কঠোর সংযম ও আত্মনিয়ন্ত্রণ সহকারে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা তা পালন করেন। অবশেষে আসে সেই খুশির দিন ঈদ। নতুন পোশাকে সুসজ্জিত হয়ে সমবেত নামাজ পাঠ। তারপর একে অন্যের সঙ্গে আলিঙ্গন। সৌহার্দ্য ও শুভেচ্ছা বিনিময়। খাওয়া দাওয়া। এমনি আঙ্গিকে ভারত তথা সমগ্র বিশ্বে পালিত হয় ঈদ উৎসব। ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে দেখতে গেলে রমজান মাস হল পুণ্য অর্জনের মোক্ষম সময়। আত্ম উন্নতি, সংযম, নিজেকে পরিবর্তন, অসহায় দীন দুঃখীদের পাশে দাঁড়ানোর এক সর্বোত্তম সময়। বছরের এই মাসটিতে মানুষের মননে লক্ষণীয় পরিবর্তন দেখা যায়। যেমন দান খয়রাত, অসহায়ের পাশে দাঁড়ানো, পাপ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখা সবেতেই যেন বাড়তি উদ্যম পাওয়া যায়। যার সামাজিক গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না। অপরাধ সহ যেকোন নেতিবাচক কাজের গ্রাফ একধাক্কায় নীচে নেমে যায়। এখানেই সফলতা পায় ধর্মের সামাজিক গুরত্ব। তবে নানা ভাষা নানা জাতি সমন্বিত ভারতে এই উৎসব আজ সর্বজনীন। মহামিলনের এক মাধ্যম। সর্ব জাতির একাত্ম হওয়ার সেতু। ধর্মীয় ভেদাভেদ ভুলে হিন্দু মুসলমান সহ সমগ্র জাতি সামিল হয়। ঘুচে যায় জাতপাতের সংকীর্ণ প্রাচীর। 4একসাথে খাওয়া একে অপরের বাড়ি ঘুরতে যাওয়ার মাধ্যমে ভেসে ওঠে মহামিলনের মিলনক্ষেত্র। তবে এ বছর মহামারী গ্রাস করেছে সমগ্র বিশ্বকে। ভারতও তার ব্যতিক্রম নয়। উৎসবে ভিলেন হয়ে দাঁড়িয়েছে ভয়ঙ্কর সংক্রামক ভাইরাস করোনা। যার ভয়ে থমকে গেছে জীবন। লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু ভাটা টেনেছে আনন্দে। ম্লান হয়ে গেছে খুশি। উৎসব হারিয়েছে জৌলুস। মানুষকে ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে চলছে চতুর্থ দফার লকডাউন। একই সঙ্গে জারি হয়েছে নিয়ন্ত্রণ বিধি ও নিষেধাজ্ঞা। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ধীর গতিতে চলছে জীবন। ফলে বৃহৎ আকারে ঈদ উৎসব পালন এবারে বড়সড় ধাক্কা খেল। তবে উৎসবের মূল উদ্দেশ্য সফল হবে নিশ্চয় করে বলা যেতেই পারে। সামাজিক দূরত্ব বাড়লেও মনের দূরত্ব কমবে না। সাম্প্রদায়িক মনোভাব ঘুচে গিয়ে তৈরি হোক বৃহৎ মন। যেখানে থাকবে শুধু ভালোবাসার জন্য নিবেদিত প্রাণ। সুমঙ্গলের কাতরতা। সংকীর্ণতার বেড়াজাল টপকে ধর্ম প্রবেশ করুক জনকল্যাণ এর বৃহৎ ক্ষেত্রে। প্রতিষ্টিত হোক সাম্য মৈত্রী সম্প্রীতি। এই উৎসবে আমাদের একটাই শপথ নিতে হবে ভারতে সাম্প্রদায়িক বিষ যেন কোন ভাবেই আমাদের মধ্যে প্রবেশ না করে। মনের মিলন ঘটে ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড়ে তৈরি হোক স্বর্গ। প্রগতি, বিশ্বায়ন উন্নয়নের নামে প্রতিযোগিতার মরন ঝাঁপে পড়ে যেন হিংস্রতা আমাদের গ্রাস না করে। সেদিকেও রাখতে হবে সজাগ দৃষ্টি। তবে এ বছরে উৎসব আনুষ্ঠানিক ভাবে পালিত না হলেও রয়েছে একরাশ আশা, নতুন সূর্য ওঠার অপেক্ষা। সংক্রামিত পৃথিবী সেরে উঠবে শীঘ্রই। স্বাভাবিক হবে জীবন, জীবিকা, সবুজ মাঠে ফিরে আসবে শিশুদের অনাবিল আনন্দ। জীবন ফিরবে চেনা ছন্দে। ঈদ পুজো পার্বন আবার আসবে চেনা রূপে নব সাজে। নব পল্লবিত বসুন্ধরা ঢেলে দেবে খুশি। এই ঈদে এটাই হোক প্রার্থনা।