Scrooling

হাঁপানি ও অ্যালার্জিজনিত সমস্যায় ভুগছেন ? বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ অয়ন শিকদার আগামী ২৫ আগস্ট বর্ধমানে আসছেন। নাম লেখাতে যোগাযোগ 9734548484 অথবা 9434360442 # টি টোয়েন্টি ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট ২০২৪ : ভারতের বিশ্ব রেকর্ড, প্রথম থেকে শেষ সব ম্যাচে ভারতের জয় # কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন আউসগ্রামের বিউটি বেগম # নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রীসভায় পশ্চিমবঙ্গ থেকে শপথ নিলেন ডঃ সুকান্ত মজুমদার ও শান্তনু ঠাকুর # আঠারো তম লোকসভা ভোটের ফলাফল : মোট আসন ৫৪৩টি। NDA - 292, INDIA - 234, Others : 17 # পশ্চিমবঙ্গে ভোটের ফলাফল : তৃণমূল কংগ্রেস - ২৯, বিজেপি - ১২, কংগ্রেস - ১

পয়জনাস পার্থেনিয়াম


পয়জনাস পার্থেনিয়াম

  ✳ প্রতনু রক্ষিত

 ➡ বৃক্ষরোপণ একটা মহৎ কাজ। বিশেষ করে আজকের এই দূষনে ভরা প্রকৃতিকে বাঁচানোর জন্য গাছ লাগানোর বিকল্প আর নেই। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে গাছের চারা রোপনের থেকে ছেদনই বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। তাতে সমাজ তথা জীবজগতের মঙ্গলই হয়।

 এখন রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় একটু ভালো করে দুপাশে তাকালেই চোখে পড়বে এক- দেড় মিটার লম্বা গুল্ম আগাছার ঝোপ, পাতাগুলো অনেকটা চন্দ্রমল্লিকার মতো খাঁজকাটা আর ছোট্ট ছোট্ট সাদা ফুলে ভর্তি। অবশ্য শুধু রাস্তার ধারে কেন? পুকুর বা যে কোন জলাশয়ের ধারে, মাঠের ধারে, খেতের ধারে, জমির আলে সর্বত্র এদের বিস্তার। এই মারাত্মক ক্ষতিকারক আগাছাটি হলো পার্থেনিয়াম। এটি অ্যাস্টেরিয়েসি ফ্যামিলির অন্তর্গত হেলিয়েনথিয়া ট্রাইবের একটি উদ্ভিদ, যার আদি বাসস্থান উত্তর আমেরিকা ও মেক্সিকোতে।

পার্থেনিয়াম জেনাসের অন্তর্গত প্রায় ১৬ টির মতো প্রজাতি আছে। এই প্রজাতিগুলোর মধ্যে বেশ কিছু বিষাক্ত। তবে সব থেকে বিষাক্ত প্রজাতিটি হলো পার্থেনিয়াম হিস্টেরোফোরাস (P.hysterophorus), যা দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের রাজ্য তথা দেশে পাওয়া যায়। তবে এই পার্থেনিয়াম সুদূর আমেরিকা থেকে এমনি এমনি আমাদের দেশে চলে আসে নি।
পঞ্চাশের দশকে গম আমদানি করার সময় অসতর্ক ভাবে এই আগাছাটি আমাদের দেশে চলে আসে। সরকারের সামান্য গাফিলতির কারণে আজকে এই আগাছার এতো বাড়বাড়ন্ত।

এই বিষাক্ত বীরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ অবহেলায় জন্মায় ও ঝোপের মতো দ্রুত বেড়ে ওঠে, বাঁচে তিন থেকে চার মাস। তার মধ্যেই প্রায় তিন থেকে চার বার ফুল হয়। ফুলগুলো ছোট,সাদা, গোলাকার ও আঠালো পিচ্ছিল জাতীয় হয়ে থাকে। এক একটা গাছ কয়েক হাজার বীজ তৈরি করতে পারে। গাজরের মতো ফুলগুলো দেখতে হয় বলে অনেকে পার্থেনিয়ামকে গাজর ঘাসও বলে। ফুলের রেণুগুলো খুব হালকা,তাই সহজেই বিস্তার লাভ করে। জামা-কাপড় থেকে শুরু করে চটি, জুতো, সাইকেল- গাড়ির চাকা এমনকি গবাদিপশুর গায়ের মাধ্যমেও এরা ছড়িয়ে পড়ে।

পার্থেনিয়ামের রেণুগুলি খুবই মারাত্মক। চামড়াতে লাগলে চুলকানি, একজিমা সহ স্কিন ইনফেকশন হতে পারে। শরীরের ভিতরে প্রবেশ করলে এলার্জি, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি এমনকি সিওপিডিও হতে পারে। এছাড়াও জ্বর, মাথাব্যথা, পরিপাকের সমস্যার মতো আরো নানান সমস্যা তৈরি হতে পারে। তবে বড়দের থেকে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি।

গবাদিপশুদের শরীরে এই রেণু প্রবেশ করলে পরিপাক সমস্যার সাথে সাথে শরীর ফুলে যেতে পারে, দুধে বিষক্রিয়া হতে পারে এমনকি অধিক আক্রান্ত হলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

এছাড়াও এই আগাছা মাটির উর্বরতা হ্রাস করে। মাটিতে উপস্থিত উপকারী ব্যাকটেরিয়ার ( নাইট্রোজেন সংবন্ধনকারী) উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। পরীক্ষাতে এটা দেখা গেছে পার্থেনিয়ামের কারণে ফসল উৎপাদন প্রায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমে যায়।
আসলে পার্থেনিয়ামের এই প্রজাতির মধ্যে sesquiterpene lactones-SQLs (মিউটাজেন/জেনোটক্সিক/এমব্রায়োটক্সিক), ক্যাফেইক অ্যাসিড, পার্থেনিন, অ্যামব্রোসিন ইত্যাদি বিষ থাকে, যা জীবদেহে  ক্ষতি সাধন করে।
তাই এই মারাত্মক আগাছাকে ধ্বংস করার জন্য সরকারি পদক্ষেপের পাশাপাশি নিজেদেরও দায়িত্ব নিতে হবে।
তিন থেকে সাড়ে তিন লিটার জলে কেজি খানেক নুন মিশিয়ে বা কেরোসিন স্প্রে করে এই আগাছা নস্ট করা সম্ভব। এছাড়াও মেট্রিবুজিন, 2,4-ডি, টারবাসিল ইত্যাদি আগাছানাশক ব্যবহারেও সুফল মেলে। তবে মনে রাখতে হবে এই কাজ করার সময় অবশ্যই মাস্ক, গ্লাভস এবং উপযুক্ত জামা-কাপড় পড়ে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। পুড়িয়ে দিয়েও এদের নষ্ট করা যায়, তবে তাতে বায়ুদূষণের সম্ভবনা বৃদ্ধি পায়।
বর্তমানে অবশ্য ফুল ফোটার আগে পার্থেনিয়ামকে জৈব সার হিসাবে ব্যবহার করার এবং রেণু থেকে রাসায়নিক সংগ্রহ করে ওষুধ তৈরির প্রচেষ্টা চলছে।