চৈতন্য মহাপ্রভু'র নামে নব নির্মিত তোরণ উদ্বোধন কাটোয়ার দাঁইহাটে

পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য শ্রমজীবী মানুষের মানবিক উদ্যোগ

বিশেষ সংবাদদাতা : মেমারি ১ ব্লকের দলুইবাজার ২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার পশ্চিমপাল্লায় পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্যে চলছে কমিউনিটি কিচেন। বুধবার  তার দশম দিন। শুরুতে একমাত্র সম্বল ছিল মতাদর্শজাত মনোবল আর সামাজিক দায়বদ্ধতা। অর্থের প্রকট সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও অসীম সাহস নিয়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য কমিউনিটি কিচেন শুরু করা হয়। আর এখন গ্রামের সমস্ত স্তরের মানুষ, যার বড়ো অংশই শ্রমজীবী, এগিয়ে এসেছেন সোৎসাহে। যোগ দিয়েছেন এই প্রয়াসে। পরিপ্রেক্ষিতটি এরকম যে, গোটা দেশ জুড়ে চলছে লক ডাউন। তৈরী হয়েছে এক সংকটজনক পরিস্থিতি। ভিন রাজ্যে কর্মরত পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফেরার কোনো সুযোগ ছিল না এতদিন, আর আজ যখন তারা সুযোগ পেয়েছেন তখন নেই কোনো যানবাহন। পায়ে হেঁটে মাইলের পর মাইল পেরিয়ে ছুটছেন তাঁরা বাড়ির পানে। চলার পথে মাথার ওপর বৈশাখের গনগনে সূর্য, কোনো দিন বেলা গড়াতেই ঝড় আর বৃষ্টি। এসব উপেক্ষা করেই তারা এগিয়ে চলেছেন দূর-দূরান্তে, তাঁদের স্বজনদের টানে, তাঁদের বাড়ির দিকে। এঁদেরই একটা অংশ চলেছেন দামোদর নদের বাঁধ ধরে, পায়ে হেঁটে, কিংবা সাইকেলে। এঁরা কেউ যাচ্ছেন বিহার, কেউ ঝাড়খন্ড, কেউ যাচ্ছেন মুর্শিদাবাদ, আবার কেউ ছত্রিশগড়। পরনের পোশাক জীর্ণ,  চোখে মুখে গভীর ক্লান্তির ছাপ। কবে শেষ পেটভরে ভাত খেয়েছেন ভুলে গেছেন অনেকেই।  গভীর ক্লান্তি শরীরে -তাতে কি, লক্ষ্য একটাই বাড়ি ফিরতেই হবে।
এই পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে মেমারি ১ ব্লকের দলুইবাজার ২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার পশ্চিমপাল্লা্র শ্রমজীবী মানুষজন, নিজেদের উজাড় করা সামর্থ্য নিয়ে এইসব অভুক্ত পরিযায়ী শ্রমিকদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেছেন। দামোদর নদের পাড় বরাবর যাওয়া  পরিযায়ী শ্রমিকদের কাছে অনুরোধ করা হচ্ছে এখানে একটু বিশ্রাম নিয়ে খাবার গ্রহণের জন্য। এই অনুরোধে সাড়া দিয়ে দুদণ্ড থামছেন তাঁরা এখানে, বিশ্রাম নিচ্ছেন, স্নান সারছেন এবং তারপর পরম তৃপ্তিতে আহার গ্রহণ। আবার ক্ষণেক বিশ্রাম, তারপর আবার শুরু পথচলা নিজ নিজ গন্তব্যের দিকে।
পশ্চিমপাল্লার শ্রমজীবী মানুষজন, মূলত যাঁরা খেতমজুর, এগিয়ে এসেছেন নিজেদের উদ্যোগে। এঁদের পাশে সহৃদয় গ্ৰামবাসীরা। চলছে এই পরিযায়ী শ্রমিকদের আপ্যায়ন সহ খাওয়ানোর ব্যবস্থা। এঁদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে গ্ৰাম থেকে অনেকটা দুরে, নদীর ধারে কাঁঠাল বাগানে, বিশ্রামের ব্যবস্থাও করেছেন। আজ দশম দিনে পা দিলো এই ব্যবস্থাপনা। এখনো পর্যন্ত  প্রায় ১৩০০ পরিযায়ী শ্রমিক এখানে বসে খেয়েছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি, শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখেই প্রত্যেকের জন্য খাবার ব্যবস্থা করার সঙ্গে  স্যানিটাইজারও দেওয়া হচ্ছে। স্নানের জন্য রাখা হয়েছে সাবান। কেউ যদি খাবার সাথে নিয়ে যেতে চান, তা হলে তারজন্যও রাখা হয়েছে প্যাকিং-এর ব্যবস্থা।
এলাকার শ্রমজীবী মানুষের এই উদ্যোগ স্বাভাবিক ভাবেই ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।