চৈতন্য মহাপ্রভু'র নামে নব নির্মিত তোরণ উদ্বোধন কাটোয়ার দাঁইহাটে

"আল্লা মেঘ দে, পানি দে, ছায়া দে রে তুই "


 

"আল্লা মেঘ দে, পানি দে, ছায়া দে রে তুই " 





🟣 বিশ্বরূপ দাস


Bishwarup Das 
Sangbad Prabhati, 24 April 2024

বৈশাখ পড়তে না পড়তেই  প্রকৃতির রুদ্ররোষের মুখে কলকাতা থেকে গোটা দক্ষিণ বঙ্গ। তাপমাত্রা ক্রমশ হাফ সেঞ্চুরির দিকে এগোচ্ছে।কোথাও এতোটুকু ছায়া নেই, সবুজ যেটুকু আছে সেটুকুও ফিকে হয়ে যাচ্ছে। জীবন যুদ্ধে বেঁচে থাকা কতিপয় গাছপালাগুলো মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।  তাদের পত্র পল্লবগুলো  জ্বরাগ্রস্থ বৃদ্ধের মতো পান্ডুর বিবর্ণ। ধরিত্রী মাতার গর্ভ বিদির্ণ করে যেভাবে প্রতিদিন গ্যালন গ্যালন জল তুলে নেওয়া হচ্ছে এবং অপচয় করা হচ্ছে তাতে মানব সভ্যতার মৃত্যু ঘণ্টা বাজলো বলে। অথচ এই বিষয়ে সাধারণ মানুষ থেকে শিক্ষিত সমাজের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। তাই প্রকৃতিকে শান্ত করতে ভরা বৈশাখেও কালবৈশাখীর দেখা নেই। মেঘ বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকলেও আদৌ বৃষ্টি হবে তো ? আছে শুধু ধুধু মরুভূমির মতো হাহুতাশ। আর চাতকের কাতর দীর্ঘশ্বাস।

আসলে আমরা কমবেশি সবাই জ্ঞান পাপী। প্রকৃতি মাতার কাছ থেকে সকাল থেকে রাত অব্দি আমরা কেবল নিয়েই যাব। কিন্তু তাকে কিছু দেবার বেলায় আমাদের হাত কপর্দক শূন্য। এমনকি নিজের জন্য এবং আমাদের ভবিষ্যতের উত্তরসূরিদের জন্য সারা বছরে আমরা একটা গাছ লাগাবার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি না। কিংবা কাউকে অনুপ্রাণিত করি না।  আমাদের এই উপেক্ষা এবং অবজ্ঞার কারণেই  আমরা আমাদের অজ্ঞাতসারে মৃত্যুকূপ খনন করছি প্রতিদিন প্রতিনিয়ত। আর ভাবের ঘরে চুরি করে মাঝেমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় গলা ফাটিয়ে বলছি "গাছ লাগাও, দেশ বাঁচাও"।কিন্তু ধারাবাহিকভাবে বৃক্ষরোপণ করবে কে? কারণ আমরা প্রত্যেকেই কমবেশি অফিস আদালত, কোর্ট কাছারিতে এবং গৃহকর্মে ব্যস্ত! ব্যক্তিগত সমস্যা এবং সময়ের অজুহাত দিয়ে আমরা কমবেশি সবাই দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে চাই। তা বুদ্ধি,  শ্রম এবং প্রচেষ্টা দিয়ে সমাধানের চেষ্টা করি না।

সুখের কথা বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং বিদ্যালয় গুলিতে মাঝেমধ্যেই অরণ্য সপ্তাহ  পালন করা হয় এবং খন্ড বনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়ে থাকে। সরকার পক্ষ থেকেও বনসৃজনের নানান পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় এবং ঘটা করে তা গণমাধ্যমে প্রকাশ করে বাহবা কুড়াবার চেষ্টা করা হয়।কিন্তু শেষ পর্যন্ত ক'টি গাছ মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকলো তার হিসেব কেউ রাখে না। কখনো সখনো কয়েকটা বৃক্ষরোপণ করে আমরা গভীর তৃপ্তির সঙ্গে  মনে করি পরিবেশ সুরক্ষার জন্য আমরা বিশাল কোন কাজ করলাম। কিন্তু একটু ভেবে দেখলেই আমরা দেখতে পাবো আমাদের এই প্রচেষ্টা অনেকটা চোখের জল দিয়ে  দাবানল নেভানোর মতো হাস্যকর। সত্যি কিছু করতে হলে প্রথমে পরিবেশের বর্তমান রূপ অনুধাবন করে  ভবিষ্যতের সম্ভাব্য পরিণতির কথা মানস চোখে দেখতে হবে। তারপর পরিবেশের ক্ষত নিরাময়ের জন্য আমাদের এমন ধারাবাহিক পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে এই ধরণী আবার সবুজে শ্যামলে ভরে ওঠে। আমাদের পরিবেশ হয়ে ওঠে এক টুকরো শান্তি নিকেতনের মত। 

অতি দ্রুত যান্ত্রিক সভ্যতা এবং নাগরিক সভ্যতার বিকাশের কারণেই পৃথিবী ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছে। এছাড়াও উপসাগরীয় যুদ্ধ, মহাকাশ গবেষণা, কলকারখানা ও যানবাহনের বিষাক্ত ধোঁয়া, প্লাস্টিক দূষণ, অতিমাত্রায় এসি ব্যবহার এই বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য দায়ী। যার কবলে পড়ে বদলে যাচ্ছে জীববৈচিত্র। বদলে যাচ্ছে স্বাভাবিক আবহাওয়া। পৃথিবীর স্বাদু জলস্তর ক্রমশ শেষ হয়ে আসছে। লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে নানান প্রজাতির জীব। ফসল উৎপাদনের হার ক্রমশ কমে যাচ্ছে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম লাফিয়ে রাখিয়ে বাড়ছে। আর এই দুইয়ের যাতা কলে পড়ে সাধারণ মানুষের জীবনে উঠছে নাভিশ্বাস। 

        তবে মেট্রো লজিক্যাল ডিপার্টমেন্ট অফ ইন্ডিয়া সাম্প্রতিক এক খবরে প্রকাশ করেছে যে  এল নিনোর প্রভাবে এ বছরে নাকি স্বাভাবিকের থেকে একটু বেশি বৃষ্টিপাত হবে। শান্ত হবে ধরা। মাঠে মাঠে ফলে উঠবে সোনার ফসল। কৃষক বধুর ম্লান মুখ রাঙা হয়ে যাবে পানে। দীর্ঘদিন পরে আবার আমরা শুনতে পাব ব্যাঙের মকমক ডাক। দেখতে পাবো ময়ূরের কলাপ। 

বসুধারা ব্রতের ধারা পথ পেয়ে  বৃষ্টি আসুক বঙ্গে।

"এক কোশ বৃষ্টির জলে জীবন ধুয়ে দিক/ কাদাখোঁচারে ঠোঁটে লাগুক বৃষ্টির স্বাদ / আমার উঠোনে জলের যে জীবন স্রোত/ তাতে ভাসিয়ে দিলাম কাগজের নৌকা খানি/ এবার অকুলে গিয়ে পড়ুক"

তাই তো আমাদের সকলের প্রার্থনা "আল্লা মেঘ দে, পানি দে, ছায়া দে রে তুই।"

      লেখক : শিক্ষক, তেজগঞ্জ হাই স্কুল, পূর্ব বর্ধমান